মৌলভীবাজার থেকে কক্সবাজার

মৌলভীবাজার থেকে কক্সবাজার: বাস সার্ভিস, ভাড়া ও সময়সূচি

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি মৌলভীবাজার এবং চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল থেকে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের দূরত্ব প্রায় ৪০০ কিলোমিটারেরও বেশি। এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সাশ্রয়ী উপায় হলো সরাসরি বাস সার্ভিস। আপনি যদি আরামদায়ক ও ঝামেলামুক্ত উপায়ে এই দুই গন্তব্যের মধ্যে যাতায়াত করতে চান, তবে সঠিক বাস কোম্পানি, ভাড়া ও সময়সূচি সম্পর্কে জানা আবশ্যক। এই আল্টিমেট গাইড আপনাকে সেই সমস্ত তথ্য দিয়ে সহায়তা করবে।

মৌলভীবাজার-কক্সবাজার রুটের প্রধান বাস সার্ভিসগুলো

মৌলভীবাজার (বা শ্রীমঙ্গল) থেকে সরাসরি কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে বেশ কিছু স্বনামধন্য পরিবহন সংস্থা নিয়মিত বাস পরিচালনা করে। এই বাসগুলো সাধারণত ঢাকা-চট্টগ্রামের রুট ধরে কক্সবাজার পৌঁছায়। জনপ্রিয় ও নির্ভরযোগ্য কয়েকটি কোম্পানির নাম নিচে দেওয়া হলো:

  • শ্যামলী পরিবহন (Shyamoli Paribahan): এই রুটে তাদের বেশ ভালো সার্ভিস রয়েছে। তারা সাধারণত নন-এসি এবং এসি (চেয়ার কোচ) উভয় ধরনের বাসই পরিচালনা করে।
  • হানিফ এন্টারপ্রাইজ (Hanif Enterprise): দেশের অন্যতম বৃহৎ এই পরিবহন সংস্থাটি এই রুটে নিয়মিত সার্ভিস দেয়। সাধারণত আরামদায়ক চেয়ার কোচ (এসি ও নন-এসি) পাওয়া যায়।
  • ইউনিক পরিবহন (Unique Paribahan): মাঝে মাঝে এই রুটে ইউনিক পরিবহনের বাসও চলাচল করে।
  • বিশেষ ট্যুরিস্ট বাস: ছুটির দিন বা পিক সিজনে অনেক সময় স্থানীয় অপারেটররা কম খরচে ট্যুরিস্ট প্যাকেজ বা বাস চালু করে, যার মাধ্যমে সরাসরি শ্রীমঙ্গল/মৌলভীবাজার থেকে কক্সবাজার যাওয়া যায়।

💡 টিপস: সরাসরি মৌলভীবাজার বা শ্রীমঙ্গল থেকে বাস না পেলে, আপনি শায়েস্তাগঞ্জ গিয়ে সেখান থেকে কক্সবাজারগামী যেকোনো বাসে উঠতে পারেন।

বাসের ভাড়া (টিকিট মূল্য): এসি বনাম নন-এসি

ভাড়ার বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে আপনার পছন্দের বাসের ক্যাটাগরি এবং ভ্রমণের মৌসুমের ওপর। পিক সিজনে (শীতকাল বা লম্বা ছুটি) ভাড়া কিছুটা বেড়ে যায়।

বাসের ধরণসুবিধাআনুমানিক ভাড়া (প্রতি জন)কাদের জন্য উপযুক্ত
নন-এসি (Non-AC)অপেক্ষাকৃত কম খরচ, সাধারণ সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্ট (চেয়ার কোচ)।১১০০ টাকা থেকে ১,২০০ টাকাবাজেট-ফ্রেন্ডলি ভ্রমণকারী
এসি (AC)শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, আরামদায়ক আসন, দীর্ঘ যাত্রার জন্য আদর্শ।১৭০০ টাকা থেকে ২,২০০ টাকাআরামপ্রিয় যাত্রী, পরিবার বা বয়স্কদের জন্য।
এসি স্লিপার (AC Sleeper)কিছু ক্ষেত্রে স্লিপার বা বার্থ পাওয়া যেতে পারে। ২৮০০ টাকা থেকে ৩৫০০ টাকাযারা শুয়ে ভ্রমণ করতে চান।

সময়সূচি ও ভ্রমণের সময়কাল

দীর্ঘ যাত্রার কারণে, মৌলভীবাজার/শ্রীমঙ্গল থেকে কক্সবাজার যাওয়ার বেশিরভাগ বাসই রাতের শিফটে ছাড়া হয়। এতে যাত্রীরা রাতে ঘুমিয়ে সকালে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন এবং দিনের মূল্যবান সময় নষ্ট হয় না।

যাত্রা শুরুর স্থানগন্তব্যছাড়ার সময় (প্রায়)কক্সবাজার পৌঁছানোর সময় (আনুমানিক)
মৌলভীবাজার/শ্রীমঙ্গলকক্সবাজারসন্ধ্যা ৭:০০ টা থেকে রাত ১০:০০ টার মধ্যেপরের দিন সকাল ৬:০০ টা থেকে ৯:০০ টার মধ্যে

মোট ভ্রমণের সময়: এই দীর্ঘ পথে সাধারণত ১১ থেকে ১৪ ঘণ্টা সময় লাগে। রাস্তার অবস্থা, এবং পথে বিরতির ওপর এই সময় নির্ভর করে।

টিকিট বুকিং এবং সতর্কতা

আপনার ভ্রমণকে সহজ করতে টিকিট বুকিং-এর ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন:

  1. অগ্রিম বুকিং: বিশেষ করে উইকেন্ড বা পর্যটন মৌসুমে টিকিট পাওয়া কঠিন হতে পারে। তাই কমপক্ষে ৫ থেকে ৭ দিন আগে আপনার পছন্দের বাসের টিকিট বুক করে রাখুন।
  2. টিকিট কাউন্টার: শ্রীমঙ্গল (হবিগঞ্জ রোড) বা মৌলভীবাজারের প্রধান বাস কাউন্টারগুলোতে সরাসরি যোগাযোগ করে টিকিট নিশ্চিত করুন।
  3. অনলাইন প্ল্যাটফর্ম: এখন অনেক কোম্পানিই তাদের নিজস্ব অ্যাপ বা জনপ্রিয় অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে টিকিট বিক্রি করে। এক্ষেত্রে আসনের ছবি দেখে সিট পছন্দ করার সুবিধা পাওয়া যায়।

দীর্ঘ ভ্রমণের জন্য বিশেষ টিপস

মৌলভীবাজার থেকে কক্সবাজারের এই দীর্ঘ যাত্রা আরামদায়ক করতে এই টিপসগুলো মেনে চলুন:

  • পোশাক: আরামদায়ক এবং ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করুন।
  • জরুরী ঔষধ: আপনার নিয়মিত ঔষধপত্র, মাথা ব্যথার ঔষধ এবং মোশন সিকনেস (Motion Sickness)-এর জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধ অবশ্যই সাথে রাখুন।
  • হালকা খাবার: বাসে অনেকক্ষণ থাকতে হবে, তাই প্রক্রিয়াজাত নয় এমন হালকা স্ন্যাকস, যেমন বিস্কিট বা ফল, সাথে রাখুন।
  • কম্বল/চাদর: এসি বাসে রাতে ঠাণ্ডা লাগতে পারে। একটি হালকা কম্বল বা চাদর সঙ্গে নিলে আরামদায়ক ঘুম হবে।
  • বিনোদনের ব্যবস্থা: দীর্ঘ সময় কাটানোর জন্য হেডফোন, পছন্দের গান, বই বা সিনেমা ডাউনলোড করে নিন।

শেষ কথা

মৌলভীবাজার থেকে কক্সবাজারের এই সরাসরি বাস যাত্রা দেশের ভেতরের সবচেয়ে দীর্ঘ বাস রুটগুলোর মধ্যে অন্যতম। সঠিক প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা থাকলে আপনার এই ভ্রমণ মোটেও ক্লান্তিকর হবে না, বরং সকালে কক্সবাজারের বালুকাময় সৈকতে সূর্যোদয় দেখার এক দারুণ সুযোগ এনে দেবে।

আপনার যদি এই রুট নিয়ে আরও কোনো নির্দিষ্ট তথ্য জানার থাকে, তবে কমেন্ট করতে পারেন!

About the author
Eliyas Ahmed

Leave a Comment